মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২১, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
এমরান হোসেন,জামালপুর জেলা প্রতিনিধি।।
মারুফা আক্তার পপি _ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।
এতোদিন গৃহবন্দী! ভাবতেই অবাক লাগছে । সেই ছাত্রলীগ করার সময় ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সরকারের অতিথি হয়ে প্রায়ই নাজিমউদ্দিম রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে বাস করতে হতো। সেই সময় জেলখানায় কেউ দেখতে গেলে মনে হতো ইশ্ একটু বাইরে যেয়ে যদি কথা বলতে পারতাম! তারপর অ-নে-ক দিন পেরিয়ে গেছে, ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কারাগারও পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড ছেড়ে কেরানিগঞ্জে তার নতুন ঠিকানা করে নিয়েছে। আমরাও নাগরিক ব্যস্ততায় সেইসব দিনের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছি। কোভিড কোয়ারান্টাইন সময় পুরানো সেই ক্ষতটা যেন নতুন করে জাগিয়ে তুললো। মনে পরে ১ম বার যখন জেলে যাই সেটা ফেব্রুয়ারি মাস ছিলো। স্যাঁতস্যাতে একটা টিনসেট ঘরের ইলিশ ফাইলের শেষ প্রান্তে বিটিভির পর্দায় একুশের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা আপাকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি,সারারাত কেঁদে ছিলাম। ভালোবাসা নীচের দিকে গড়ায়, এবারো মাঝে মাঝে তাই হয়েছে তবে প্রেক্ষাপটটা একটু ভিন্ন। মাদিবা মায়াণী, আমার মেয়ে,ওর ১০/সাড়ে ১০ বছর বয়সে হাতে গোনা ২/১ রাত ব্যতীত কখনো মাকে ছাড়া ঘুমায়নি। সারাদিন যেমন তেমন রাতের ভাতটা ওর মা’র হাতে খাওয়া চাই-ই চাই। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের বিছানায় শোয়ে শোয়ে লক্ষ্য করলাম আমার সেই ছোট্ট মেয়েটা কেমন যেন বড় হয়ে গেছে। রাতে ঘুমানোর আগে ওর সাথে ভিডিও কলে কথা হতো, প্রতিদিন একই প্রশ্ন – তুমি কখন আসবা? আমারও এক এক দিন ওর মন ভুলানো এক এক রকম উত্তর। একদিন রিপোর্টে দেখি হঠাৎ করেই রক্তের ঘনত্ব (D-Dimer)অনেক বেড়ে গেছে, নিজেও কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সেই রাতে মাদিবা আমাকে ফোন দিলো,ওকে অনেকটাই ম্রিয়মান দেখাচ্ছিলো,বরাবরের মতো সেই একই জিজ্ঞাসা কখন আসবা? আমি বললাম,বাবা, ডাক্তার একটা টেস্ট দিছে তো ওটা করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে পরে আসতে হবে। ও মনে হয় একটু থেমে গেলো, তারপর বললো, তোমার ডাক্তারকে আমি মাইর দিমু। আমি বললাম, না বাবা ডাক্তার কতো কষ্ট করছে, মা’র খেয়াল রাখছে, এভাবে বলে না। ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখি আমার মেয়ের চোখ ভেঁজা অথচ ও কাঁদছে না। নিজের অজান্তেই আমারও চোখের কোন ভিঁজে এলো। ওকে শুধু বললাম, বাবা, অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমাও। আমিও ঘুমাবো। *২০ দিন হাসপাতালে ছিলাম, এই সময় সুমি বাসায় এসে মাদিবার খোঁজ খবর নিয়েছে। ওর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ওর বাসা আর আমার বাসা কাছাকাছি। সুমি আমার ছাত্রলীগের ছোটবোন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনের ছাত্রী ছিলো। আমি যখন রোকেয়া হলের সেক্রেটারী ও তখন কুয়েত মৈত্রী হলের প্রেসিডেন্ট। আজকেও হুটকরে নিজের রান্না করা খাবার দাবার নিয়ে বিনা নোটিশে বাসায় এসে হাজির। কোয়ারান্টাইনের শিকলে বন্দি আমি বিছানায় বসেই ওর সাথে কথা বললাম। যাবার সময় ২২ দিন পর প্রথমবারের মতো ঘরের বাইরে পরিচিত আঙিনায় আস্তে আস্তে হাঁটলাম, দূরত্ব বজায় রেখে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম সুমিকে। অনেক দিন পর পরিচিত এক ভালো লাগার আবেশ অনুভব করলাম, কিছুটা সুস্হও বোধ করলাম। এই ভালো লাগার, এই বন্ধনের কোন সূত্র নেই, নেই কোন সমীকরণ। এই ভালো লাগার এই বন্ধন যেন আজীবন অটুট থাকে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলের সহায় হোন।